Meditation
মেডিটেশন বা ধ্যান (মোরাক্বাবা) বলতে কি বুঝায়?
উত্তর:- মেডিটেশন বা ধ্যান হচ্ছে মন দ্বারা বিশ্বজগত ও দেহজগতকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষন বা নিরীক্ষন করা। মানুষের ব্রেইন থেকে মনের মধ্যে প্রতিদিন নব্বই হাজার ইনফরমেশন বা ইমেজ অবতরণ করে। এই অবতারিত ইনফরমেশনকে সিনক্রোনাইস করে অপ্রয়োজনীয় বা ঋণাত্বক সবকিছুকে পৃথক করে, ধণাত্মক ও প্রয়োজনীয় সবকিছুকে একত্রিত করে তা হতে বহু ইমেজ থেকে একটি ইমেজ বা ইনফরমেশনকে একাগ্রচিত্তে ধণাত্মক শক্তিতে পরিনত করাই মেডিটেশন।
মানুষ ঘুমালে স্বপ্ন দেখে। কেন স্বপ্ন দেখে? মানুষ যখন ঘুমায় তখন তার ইন্দ্রীয়সমুহ যথা চোখ, কান, মুখসহ অন্যান্য সকল ইন্দ্রীয়ের কাজ বন্ধ থাকে, ফলত ব্রেইন সালীম বা প্রশান্ত অবস্থায় থেকে মনে ইনফরমেশন অবতরণ করতে থাকে, তখন মানুষ স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন মানুষের অন্তর্দৃষ্টির কর্ম। আমরা কেউ স্বপ্ন বুঝতে পারি, কেউ বুঝতে পারি না, কারো স্বপ্ন সঠিক হয়, কারো কাছে সঠিক মনে হয় না। কিন্তু স্বপ্ন সঠিক। স্রষ্টা বলেন, মা কাজাবাল ফুয়াদু মা রাআ অর্থাৎ মন যা দেখে তা মিথ্যা নয়। আমাদের (জ্ঞান এবং প্রজ্ঞার) যোগ্যতার কারণে এই পার্থক্য ঘটে থাকে।
মানুষের ব্রেইনের বিভিন্ন লেভেলে বিভিন্ন পর্যায়ের মেডিটেশন হয়ে থাকে। যেমনঃ
(এক): তাফাক্কুর বা Contemplation: আল্ ক্বোরআন বলেঃ যা আছে এই বিশ্ব ভান্ডে তা আছে নিজের দেহভান্ডে। আফাক বা বিশ্বজগতে স্রষ্টার নিদর্শণ সমুহের সাথে নিজের দেহভান্ডে স্রষ্টার নিদর্শণসমুহের সামঞ্জস্য করে, বিশ্ব প্রকৃতির সাথে নিজের প্রকৃতির সমন্বয় করে ফিতরাত বা প্রকৃতির আয়নায় দয়াময়ের তালাশে গভীর চিন্তা বা ধ্যানই হচ্ছে Contemplation বা তাফাক্কুর। পবিত্র আল ক্বোরানুল হাকীমে তাফাক্কুর বা Contemplation সংক্রান্ত আয়াতের সংখ্যা ১৬৮ টি। আল্লাহ তা’আলা বলেন:
وَسَخَّرَ لَكُمْ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مِنْهُ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
আর তিনি নিজ অনুগ্রহে তোমাদের উপকারার্থে আয়ত্তাধীন করে দিয়েছেন যা কিছু আছে আসমানে এবং যা কিছু আছে জমিনে সবই। নিশ্চয় এতে তাফাক্কুর বা চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যারা চিন্তা (ধ্যান) করে (সূত্রঃ আল ক্বোরআন ৪৫:১৩)।
(দুই): প্রতিবিম্ব বা Reflection: মানুষের মনে অনেক চিন্তা বা ছবির উদ্ভব হয়। Reflection এর মাধ্যমে মানুষ ছবিকে শক্তিতে পরিণত করতে পারে। আর এই Reflection শক্তি দ্বারা ঋণাত্মক কে ধণাত্মক শক্তিতে পরিণত করতে প্লান তৈরী করা সম্ভব। আর এই প্লানটি রিফ্লেকশনের মাধ্যমে কর্মফলে রুপান্তরিত হয়ে বস্তুসত্বায় প্রকাশ ঘটায়।
(তিন): একাগ্রতা বা Concentration: মানুষের মনে প্রতিদিন নব্বই হাজার ইনফরমেশন বা ইমেজ মনের পর্দায় ভাসতে থাকে। এই ইনফরমেশন সমুহ দুই ধরণের হয়ে থাকে, পজেটিভ এবং নেগেটিভ। মানুষের মন বড় অস্থির। তাই মন এক ইনফরমেশন থেকে অন্য ইনফরমেশনের দিকে দৌড়াতে থাকে। এই অস্থির মনকে কোন একটি পজেটিভ ইনফরমেশন বা ইমেজে আবদ্ধ করাই হচ্ছে একাগ্রতা। মানুষ যখন একাগ্র হতে পারে তখন তার সাবকনসাস বা অবচেতন মন সেই ইনফরমেশনটি গ্রহন করে ব্রেইনকে নির্দেশনা দেয়।
(চার): অন্তরের ছবিঃ Concentrate on best face of Mind: মানুষের অন্তরে প্রতিদিন হাজার হাজার ধরনের ছবি ভেসে আসে। সেখানে রয়েছে ভাল ও খারাপ ছবি। ভাল ছবিও আবার দুধরণের মানুষ ও অন্যান্য সৃষ্টি। অন্যান্য সৃষ্টি থেকে মানুষ শ্রেষ্ঠ তথা আশরাফুল মাখলুকাত। মানুষের ছবিও আবার দুধরণের জীবন্ত ও মৃত। জীবন্ত মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে পিতা, মাতা, ওস্তাদ, ওলী-আউলিয়া। জীবন্ত ভাল ছবি সমুহের মধ্যে একটিকে সর্ব উচ্চ মর্যাদায় নিধারণ করুন যা দেখাও এবাদাত।
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
يُرِيدُونَ وَجْهَهُ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ
অর্থঃ পার্থিব জীবনের জাঁকজমকের প্রত্যাশায় আপনি তাদের চেহারা হতে স্বীয় দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেনে না (সূত্রঃ আল ক্বোরআন ১৮:২৮)। রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেনঃ
أن النظر إلى وجه النبي صلى الله عليه وسلم كافٍ لمن كان له قلب مستنير
অর্থঃ নিশ্চয়ই হজরত মোহাম্মদ (সঃ) এর চেহারার দিকে তাকানো ঐ ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট যে ব্যক্তির রয়েছে আলোকিত অন্তর। রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেনঃ হযরত আলীর চেহারার দিকে তাকানো এবাদাত। রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) আরো বলেনঃ সদাচারণকারী সন্তান আপন পিতা-মাতার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকায়, তখন আল্লাহ্ তা’আলা সন্তানের প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে তার আমল নামায় একটি মক্ববুল হজ্ব লিপিবদ্ধ করেন। তাই ধ্যান করতে থাকুন আপনার পিতা বা মাতা, ওস্তাদ, হাদী/ মোর্শেদ যাকে আপনি সবচেয়ে বেশী পছন্দ করেন।
(পাঁচ): আলোকিতকরণবা Enlightenment: বৃষ্টি যেমন শুষ্ক জমিনকে সিক্ত করে থাকে তেমনি আল্লাহ তা’আলার নূর মৃত হৃদয়কে জীবিত করতে পারে। অন্তর যখন গুমরাহীর অন্ধকারে ছেয়ে যায় তখন আল্লাহর নূর আকস্মিকভাবে ঐ অন্তরকে আলোকোজ্জ্বল করে তোলে। ফলে ঐ বান্দার অন্তরে ওহী ও প্রজ্ঞা নাযিল হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ তিনি যাকে ইচ্ছে প্রজ্ঞা দান করেন এবং যাকে প্রজ্ঞা প্রদান করা হয় সে তো প্রচুর কল্যাণ প্রাপ্ত হয়। জ্ঞানবানরা ছাড়া কেউ উপদেশ গ্রহণ করে না (সূত্রঃ আল্ ক্বোরআন ২:২৬৯)। ওহী হচ্ছে অন্তরের তালাচাবি স্বরূপ। অন্তরে আদেশ প্রাপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়াই হচ্ছে Enlightenment বা আলোকিতকরণ।
(ছয়): মোরাক্বাবা বা Meditation: مراقبة মুরাক্বাবা শব্দটির মাদ্দাرقاب রাক্বিবুন যার অর্থ পর্যবেক্ষন করা যা পবিত্র আল্ ক্বোরআনে ২৪ বার রয়েছে। মোরাক্বাবা হচ্ছে, জাগ্রত অবস্থায় সমস্ত ইন্দ্রীয় সমুহের কর্ম বন্ধ করে ব্রেইনকে সালীম বা প্রশান্তঅবস্থায় এনে জাগ্রত অবস্থায় ব্রেইনের তথ্যভান্ডার বা লৌহমাহফুয হতে মনে ইনফরমেশন অবতরণ করাই মেডিটেশন।। মেডিটেশনের উচ্চতর লেভেলে সমস্ত ইনফরমেশনকে মুছে জিরো ইমেজ বা ইনফরমেশনে পৌছতে হয়।
স্রষ্টার পরিচয় প্রাপ্তির মাধ্যমে আপনার সকল এবাদত স্রষ্টার নিকট পৌছানোর লক্ষ্যে একাগ্রতা অর্জন অত্যাবশ্যক এবং এই একাগ্রতা অর্জনের পদ্ধতি হল মোরাক্বাবা বা মেডিটেশন। আমরা সকলে অবগত আছি যে, হেরাগুহায় রাসূল ( স:) তাহান্নুছ পদ্ধতিতে ১৫ বছর ধ্যান বা মোরাক্বাবা করেছেন। মোরাক্বাবার সঠিক পদ্ধতি যা বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন নবীগণের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার ভিত্তি শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাসাউফ ফাউন্ডেশন আত্মশুদ্ধ সমাজ বিনির্মানে নিম্নবর্ণিত মেডিটেশন প্রক্রিয়া চালু রেখেছেন।
- ফ্রি মেডিটেশন Free Meditation (One Day)
- বেসিক মেডিটেশন Basic Meditation (Two Days)
- সূফী মেডিটেশন Sufi Meditation (Spiritual Science is Muraqaba or Sufi Meditation) (Three Days)
- দেহতত্ত্বের আধ্যাত্মিক কোর্স Spiritual Physiology Higher Course (One year)
ফ্রি মেডিটেশন (একদিন)
তাসাউফ ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত মেডিটেশনের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেনঃ জীবনে ব্যর্থতার কারণ ও উত্তরণের উপায়, মানসিক ও শারীরিক সূস্থ্যতা ও হিলিং, মনের অস্থিরতা দূরীকরণ করে আত্মাকে প্রশান্ত করা, আত্মবিশ্বাসী হওয়ার কৌশল, কুপ্রবৃত্তি দমন করে মনকে একাগ্রচিত্ত করা, এবাদাতে একাগ্রতা ও বিনয়তা অর্জনের কৌশল, প্রাথমিক ব্রিদ্রিং প্রসেস ও বায়ু নিয়ন্ত্রণের কৌশল, সময় জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে শুভ সময়ে শুভ কাজ সম্পন্ন করা, সৃষ্টিজগতের বিভিন্ন নিদর্শন নিয়ে গভীর চিন্তা বা তাফাক্কুরের কৌশল, প্রাথমিক মেডিটেশন এবং রিফেলেক্সশন সংক্রান্ত প্রাথমিক কৌশল।
বেসিক মেডিটেশন (দুই দিন)
তাসাউফ ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত বেসিক মেডিটেশনের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেনঃ কুপ্রবৃত্তি দমন ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি লাভ, নেতিবাচক চিন্তাকে ইতিবাচক করার প্রক্রিয়া, ব্যক্তিগত জীবনে সাফল্য লাভের প্রক্রিয়া, পবিত্রতা হাসিলের বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া, মানব দেহের চৌদ্দটি আধ্যাত্মিক ষ্টেশনের পরিচিতি, স্রস্টার প্রতিনিধি হিসাবে নিজের সসীম গুণাবলীকে অসীমে রূপান্তরিত করে সার্বজনীন হওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে পাস-আনফাস জিকির ও বায়ু নিয়ন্ত্রণের কৌশল, প্রত্যেক লতিফায় জিকিরের প্রক্রিয়া, সময় জ্ঞান অর্জন করে দূর্ভাগ্যকে সৌভাগ্য পরিণত করা, একাগ্রতা ও বিনয়তা মাধ্যমে এবাদাত সম্পন্ন করা, দেহ, মেডিটেশনের মাধ্যেমে মন ও আত্মার একত্রিকরন প্রক্রিয়া, মানসিক ও শারীরিক রোগ নিরাময়ে মেডিটেশন ও হিলিং প্রক্রিয়া, নাফসে আম্মারাহকে নাফসে মুত্বমাইন্নায় উন্নীত করন, অন্তর আলোকিত করা তথা মোরাক্বাবায়ে নূর দর্শন, আত্মদর্শন ও নিজের মাঝে বিশ্বজগতকে আবিস্কার করা, আফাকে ও আনফাসে তাফাক্কুরের বিভিন্ন প্রক্রিয়া, মেডিটেশন এবং রিফ্লেক্সশন সংক্রান্ত বেসিক কৌশল।
সূফী মেডিটেশন (তিন দিন): সূফি মেডিটেশনের উদ্দেশ্য হচ্ছে আত্মদর্শনের মাধ্যমে সত্যদর্শন, নিজেকে চেনার মাধ্যমে আল্লাহ্কে চেনা, নিজেকে আল্লাহ্তে সমর্পণ করা, আত্মজ্ঞান লাভ করা, নিজের মধ্যে যে আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে তা উদঘাটিত করে দেহের মধ্যে স্রষ্টার নিদর্শণ সমুহের পরিচয় জেনে নিজের অস্তিত্বে (আলমে কবির) বিশ্বজগতকে (আলমে ছগীর) দেখা, চেতনা শক্তিকে জাগ্রত করে জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার সংযোগ স্থাপন করে স্রষ্টার সংযোগ লাভ করা, আর এসব জ্ঞান অর্জন করাই হচ্ছে তাসাউফ এবং এসব লাভ করার প্রক্রিয়াই হচ্ছে সূফী মেডিটেশন।
সূফী মেডিটেশন এর মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটে, আত্মবিশ্বাসী করে তোলে, রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময় করে, আধ্যাত্মিক ও জাগতিক সফলতা নিশ্চিত করে, ধ্যানে একাগ্রতা অর্জিত হয় যা সকল এবাদতের জন্য বিশেষ প্রয়োজন, নিজেকে আল্লাহ্তে সমর্পণ করা যায়। কুপ্রবৃত্তি দমন করে নাফসে্র পবিত্রতা অর্জন এবং সিরাজাম মুনিরা গ্রহনে আত্মিক পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি, মোরাক্বাবার অনুশীলন, ফারাসাত Intuition (অর্ন্তচক্ষু) হাসিলের পদ্ধতি এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে পাস-আনফাস (Breathe Control), হিফজে দম (Breathe Holding) ও সুলতানুল আজকার (সর্বাঙ্গে জিকির) ইত্যাদি প্রক্রিয়া শিক্ষা দেয়া হয়।
Curriculum of Spiritual Physiology Higher Course
দেহতত্ত্বের উচ্চতর আধ্যাত্মিক কোর্সের পাঠ্যক্রমঃ
Spiritual Physiology Higher Course বা দেহতত্ত্বের উচ্চতর আধ্যাত্মিক কোর্সঃ একজন মানুষ নিজেকে স্রষ্টার বান্দা বা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্ব আশরাফুল মাকলুকাত দাবী করতে যা অত্যাবর্শক তা হচ্ছে স্রষ্টা পরিচিতি জ্ঞান অর্জন। স্রষ্টা পরিচিতি জ্ঞান ব্যতীত সকল এবাদত শির্কে পরিপূর্ণ। তাই হযরত মোহাম্মদ (সঃ) বলেন, “আল্লাহর হাক্বীক্বাত সম্পর্কে যার জ্ঞান নেই সে ঈমানদার নয়। আলহাদী আল ক্বোরানুল হাকীম থেকে প্রায় তিন শতাধিক আয়াতকে একত্রিত করে আল্লাহ পরিচিতির পরম তত্ত্ব ও সিফাত তত্ত্ব কে ঈমানদার মানুষের জন্যে স্পষ্ট ও বোধগম্য হয় এরূপভাবে শিক্ষা প্রদান করেন। ইতিপূর্বে কোন সূফি বুযুর্গ বিষয়টি স্পষ্ট করে নাই। পরম ও সিফাত সংক্রান্ত জ্ঞান না থাকলে তার কোন এবাদাতই স্রষ্টার নিকট গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। বিষয়টি সম্পূর্ণ গবেষনামুলক, দালিলিকভাবে প্রমাণিত, কোন কাল্পনিক বা ধারণালব্ধ নয়। Spiritual Physiology Higher Course বা দেহতত্ত্বের উচ্চতর আধ্যাত্মিক কোর্স এর মাধ্যমে প্রথমেই জানতে পারবেন পরম তত্ত্ব আহাদ আল্লাহ (গঞ্জে মাখাফি নির্গূণ সত্ত্বা), সিফাত তত্ত্ব ওয়াহিদ আল্লাহ (তিনিত্ব বা আহাদের প্রতিচ্ছবি), আলমে আরওয়াহ্ বা মহা-আত্মাজগত, আলমে আমছাল বা ছবির জগত বা নকসা বা প্লান বা লৌহ মাহফুয, আলমে আজছাম বা শরীরি জগত বা জড় জীব বিশ্বজগত। এই কোর্সে উক্ত পাঁচটি বিষয়ে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান প্রদান করে আল্লাহর নামতত্ত্ব ও গুণতত্ত্ব উম্মোচন করে কিভাবে আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হওয়া যায় সে প্রক্রিয়া শিক্ষা দেয়া হয়। এই কোর্সে লগস তত্ত্ব, প্রজ্ঞাতত্ত্ব, আহাদ থেকে সৃষ্ট আহমদ, আসমানে আহমদ জিসমানে মোহাম্মদ, হাকীকতে নূরে মোহাম্মদী তথা সকল সৃষ্টিতে বীজরূপে নূরে মোহাম্মদীর নূর বা জ্ঞান, নূরে মোহাম্মদীর পর্যায়ক্রম, ওয়াহ্-দানিয়াত বা একত্বের পরিচিতি তথা আলমে হাহুত, আলমে লাহুত, আলমে জাবারুত, আলমে মালাকুত, আলমে নাসূত পরিচিতি ও ভ্রমন প্রক্রিয়া শিক্ষা দেওয়া হয়।।
আল্লাহর নিদর্শণ রয়েছে বিশ্বজগতে এবং নিজের দেহে। আলহাদী Spiritual Physiology Higher Course বা দেহতত্ত্বের উচ্চতর আধ্যাত্মিক কোর্সে আল ক্বোরআনুল হাকীম থেকে নব্বইটি আয়াত বা নিদর্শন যেমন কাবা, ক্বেবলা, আরশ, কালেমা তৈয়্যবা, সালাত, সূর্য ও চন্দ্র, জিব্রাঈল, শয়তান, সমুদ্র এ ধরণের আরো বিষয়াদি ক্বোরআনের আলোকে এবং আভিধানিকভাবে বিশ্বজগতের স্রষ্টার নিদর্শন সমূহকে নিজের দেহে পরিচিত করে প্রতিটি বস্তুর হাকীকত শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে যার ফলে লব্ধ নৈকট্যবর্তী জ্ঞান বা এলমে লাদুন্না অর্জন করা সম্ভব হয়।
আত্মদর্শন তথা আল ক্বোরআনের আলোকে আদম ও তার বংশধর সৃষ্টি, ভ্রূণ গঠন, মানব সৃষ্টির ৯ টি পর্যায়ক্রম নযুল বা অবতরণের নয়টি স্তর, নুৎফা থেকে আদমের বংশধর সৃষ্টি, জোড়া সৃষ্টির রহস্য, মানবজাতির মর্যাদা, বায়আত বা অঙ্গীকার, বেলায়ত ও বেলায়তের প্রকারভেদ, আল্লাহর নৈকট্যের মাধ্যমে আল্লাহ হতে প্রাপ্ত ক্ষমতায় ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে মানব সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার বাস্তবমুখী শিক্ষা প্রদান করা হয়। আলমে আমর বা সূক্ষ্ম জগত তথা ক্বালব, রূহ, সির, খফী, আখফা সংক্রান্ত আয়াত সমুহ একত্রিত করে উক্ত বিষয় সমুহের হাকীকাত ও ব্যবহারিক জ্ঞান দেয়া হয়। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র ক্বোরআনের ৩০ ধরণের ভাল ক্বালব এবং ১৫ ধরণের মন্দ ক্বালবের নাম ঘোষনা করার পরও অনেকে ক্বালব সাত প্রকার লিখে বই লিখে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছেন, এ ধরনের বহু বিষয়ে আল ক্বোরআন ভিত্তিক সঠিক তথ্য প্রদান করা এই কোর্সের একটি উদ্দেশ্য। ক্বালব জারীর প্রক্রিয়া, নাফস্ বিষয়ে গবেষনালব্ধ জ্ঞান বিতরণ করেন আলহাদী।
(আলমে খালক বা মর্ত্যজাত রূহ হচ্ছে ঐ সূক্ষ্ম বাষ্প যা মানব দেহের পাঁচটি উপদানে গঠিত। স্তর পাচটিঃ ইথার, বায়ু, অগ্নি, জল, মাটি। এই মর্ত্যজাত রূহকে নাফস বলা হয়। আলমে খালকের আব আতশ খাক বাদ ইথার নিয়ে আল ক্বোরআনুল হাকীম থেকে সকল তথ্য উপস্থাপন করা হয় যার মাধ্যমে প্রতিটি মানুষ নিজের মধ্যে এসব খুজে পাবে এবং সাধনার মাধ্যমে নিজের আত্মিক উন্নতি লাভ করতে পারবে। দশ লতিফার শিক্ষা সমাপ্তির পর সালেক দায়রায়ে পদার্পন করে। তাই আঠারটি দায়রা পরিচিতি ও ভ্রমন প্রক্রিয়া শিখানো হয়।? দেহ জগত ভ্রমনের শ্যায়খ সৈয়দ আবদুল কাদের জিলানীর ছবক নব্বই তালিম শিক্ষা দেয়া হয়। কুন ফায়াকুন এর ৬০ তালিম, পঞ্চ মকামের ফেল, পঞ্চ আমরের ফেল, পঞ্চ অজুদের ফেল, পঞ্চ রুহের ফেল, নাফসের ফেল, পঞ্চতনে পাঞ্জাতন পরিচিতি, চল্লিশ গঞ্জদেহ, প্রতি ঘন্টায় আব, আতশ, খাক, বাদ ইথার এর সময় নিরূপন, তিন এর তালিম, মানব দেহে তিনটি চক্ষু, চার এর তালিম, পঞ্চ ইন্দ্রিয়, পঞ্চ কেবলা, পঞ্চ রূহ, ছয় রিপু, সাত আরশ, সাত আসমান, সাত জমিন, সাত সমুদ্র, সাত সিফাত, আট কুঠুরী, নয় দরজা, নয় বাতুন, দশ হাউস, দশ লতিফা, এগার নক্ষত্র, বার বুরুজ, তের নদী, চৌদ্দ কামান, চৌদ্দ সেজদা, পনর মকান, ষোল প্রহরী, এভাবে ক্রমান্বয়ে ৪০ সংখ্যা পর্যন্ত মানবদেহের পরিচিতি দেয়া হয়। আলহাদী পানির আয়াত সমুহকে একত্রিত করে পানির নিগুড় রহস্য নিয়ে পর্যালোচনা করেন। যেমন আফাকে বা বিশ্বজগতে রয়েছে বারটি প্রস্রবন আর মানবদেহে রয়েছে ১৪টি প্রস্রবন। এই বারটি প্রস্রবনের জন্য রয়েছে বারটি ঘাট যা বারটি কওমের জন্য।
পবিত্র ক্বোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ৫৬:৫৮-৭৪ : তোমরা কি ভেবে দেখেছ তোমাদের বীর্যপাত সম্বন্ধে? এই ভেবে দেখাই হচ্ছে অটলত্ব লাভের চেষ্ঠা করা, কুওয়্যাত শক্তিতে সিদ্ধিলাভ। কালেমায়ে তৈয়বা, সালাত, সওম, হজ্ব, যাকাত, মসজিদ, কাবা, মিরাজ ও সেজদার হাকীকাত আলোচনা করা হয়। মন, মনের প্রকার ভেদ, চেতন ও অবচেতন মনের বিবরণ, প্লান তৈরী করার কৌশল, মনের টেলিপ্যাথি পাওয়ার, হিলিং পাওয়ার, টেলকিনেস পাওয়ার, থার্ড আই পাওয়ার ইত্যাদি জ্ঞান লাভ করা যায়। নারী তত্ত্ব, পুরুষ তত্ত্ব, সংখ্যা তত্ত্ব, সাধন তত্ত্ব, বায়ু তত্ত্ব, নূর তত্ত্ব ইত্যাদি আলোচনা করা হয়। সময় জ্ঞান, শুভ অশুভ সময়, জকি ছাআত বা বুদ্ধিমান সময়, সেতারার চলাচল, জোয়ার ভাটার কারণ, আমবস্যা ও পূর্ণিমা অবস্থান, একই দিনে ছয়কাল এই সকল বিষয় পরিপূর্ণ তত্ত্ব জানানো হয়। তাছাড়া বায়ু তত্ত্ব, শুভ বায়ু অশুভ বায়ু, ঊরূজ বিল বোরাকি বায়ু সাধনায় বোরাকের মাধ্যমে নাফস অনিল হাওয়াকে আখফায় উত্তোলন করে কামালিয়াত অর্জনের প্রক্রিয়া শিক্ষা দেয়া হয়।
Spiritual Physiology Higher Course বা দেহতত্ত্বের উচ্চতর আধ্যাত্মিক কোর্সে রয়েছে উচ্চতর মেডিটেশন। আপনি এই মেডিটেশনের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেহের স্বাস্থ্য উদ্ধার, মেধার বিকাশ, সংকট নিরসন, নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, চেতনার প্রোগ্রাম পরিবর্তন করে অবচেতন মনে পজেটিভ প্রোগ্রাম তৈরী করতে পারবেন। এ সকল জ্ঞান অর্জন ও এদের ব্যবহারিক প্রয়োগের মাধ্যমে আপনি সফলতার দিকে দ্রুত এগিয়ে যাবেন যা এ মুহুর্তে আপনি ভাবতেও পারবেন না। এ কোর্সে বিভিন্ন ব্রিদিং প্রক্রিয়া শিক্ষা দেওয়া হয় যার মাধ্যমে শারীরিক সুস্থতা সহ আধ্যাত্মিক উন্নয়ন সাধিত হয়। জিকিরে পাস-আনফাস, ক্বালবে দম, সির দম, নাফছে দম, রূহে দম, খফি দম, আখফা দম বা হিফজে দম শিক্ষা দেওয়া হয়।
মেডিটেশন এর বিভিন্ন স্তরসমুহ যেমন নিজের ভিতরের জগত পর্যবেক্ষন করা, গভীর চিন্তা করা বা তাফাক্কুর, একাগ্রতা অর্জন, নিজের চেহারার প্রতিবিম্ব দর্শন, বিশ্বজগতের ভ্রমন, সায়রে আনফাসি বা নিজেকে আলোকিতকরণ স্তর সমূহ শিক্ষা প্রদান করা হয়। আপনি যে বিষয়ে বা যে ক্ষেত্রে নিজেকে উন্নত করতে চান সে বিষয়ে সাধনার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক উন্নয়ন সম্ভব হবে এই কোর্সে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। আপনার মনের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ইমেজ আকারে দেখার প্রক্রিয়া মেডিটেশনের একটি উচ্চতর স্তর যা আলহাদী শিক্ষা দিয়ে থাকেন।
আধ্যাত্মিক বিজ্ঞানই মোরাক্বাবা বা সূফি মেডিটেশনঃ
বর্তমান যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সাইন্টিফিক মেডিটেশন এর নামে যা করা হচ্ছে তা কোন নবী, ওলী-বুযুর্গ বা সূফীরা করেন নাই। পৃথিবীর আদিতে আদম (আঃ) হতে শুরু করে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) পর্যন্ত একলক্ষ চবিবশ হাজার নবী রাসূলগণ যা করেছেন তা হচ্ছে মোরাক্বাবা, ক্বোরআন হাদীস সমর্থিত ধ্যানের পদ্ধতি যা তাহাননুস পদ্ধতির মোরাক্বাবা নামে পরিচিত। যুগে যুগে কালে কালে সকল নবী রাসূল ওলী বুযুর্গ, সূফী দরবেশগণ এই পদ্ধতির ধারক ও বাহক ছিলেন। যে প্রক্রিয়ায় বর্তমান যুগের প্রচলিত সাইন্টিফিক মেডিটেশন পরিচালিত হচ্ছে তা কোন নবী ওলীগণ করেননি। উপরোন্তু তাঁরা যে প্রক্রিয়ায় মোরাক্বাবা করেছেন তা হচ্ছে সূফি মেডিটেশন। যারা এই মোরাক্বাবার শিক্ষক বা হাদী তারা রাসূল মুহাম্মদ (সঃ) পর্যন্ত সিলসিলাভুক্ত (শিকলের মত একটির সাথে আরেকটি সংযুক্ত) হবেন এবং সিরাজাম মুনিরার বাহক হবেন। এই হাদীগণ শরীয়ত ও আধ্যাত্মিক বিদ্যায় উত্তরাধিকারী ও প্রাজ্ঞ হবেন। বর্তমানের প্রচলিত সাইন্টিফিক মেডিটেশন যাদের দ্বারা পরিচালিত তারা কোন ধর্মবেত্তা নন এবং আধ্যাত্মিক সাধকও নন ফলে ধর্মানুরাগীদের জন্য এ ধরণের প্রচলিত সাইন্টিফিক মেডিটেশন এর পরিচালকগণ হাতুড়ে ডাক্তারদের মত যাদের হাতে চিকিৎসা নিরাপদ নয়। মানুষের মন কল্পনাপ্রবণ বিধায় প্রতিদিন হাজার হাজার ছবি ধারণ করে যা ধ্যানের পক্ষে অন্তরায়। মোরাক্বাবার অন্যতম কাজ হচ্ছে মনকে একদিকে কেন্দ্রিভূত করা, একাগ্রচিত্ত করা, সকল ছবি মুছে মনকে স্রষ্টার নূরে আলোকিত করা। পক্ষান্তরে সাইন্টিফিক মেডিটেশন কল্পনা প্রবণ মনকে আরো কল্পনার দিকে ধাবিত করে, ফলে তারা তৈরী করতে থাকে বাস্তবতা বিবর্জিত ক্ষণস্থায়ী এক কল্পনার রাজ্য মনের বাড়ী যা কল্পনাতেই নিঃশেষ হয়ে যায়, তাসের ঘরের মত যা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। যে প্রক্রিয়ায় সাইন্টিফিক মেডিটেশন পরিচালিত হচ্ছে সে প্রক্রিয়ায় কখনো ধ্যানে অগ্রগামী হওয়া যাবে না উপরন্তু মনে ধ্যানের প্রতি বিরক্তি এসে ধ্যান সম্পর্কেনেতিবাচক চিন্তার উদ্ভব হবে, ফলশ্রুতিতে মানুষ চিরতরে ধ্যান হতে বের হয়ে যাবে যা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। বিশ্বব্যাপী প্রচলিত এসব সাইন্টিফিক প্রক্রিয়ায় মনের একাগ্রতা কখনো সম্ভব নয়। সূফি মেডিটেশন যা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে হাজার বছর ধরে আধ্যাত্মিক সাধকরা চর্চা করে যাচ্ছেন এবং জাগতিক ও আধ্যাত্মিক সফলতা অর্জন করেছেন যার প্রমান বিভিন্ন কিতাবে রয়েছে। তাই সূফিমেডিটেশনই হতে পারে আপনার জীবনের সাধনার একমাত্র পথ।
আপনারা কার উদ্ভাবিত মেডিটেশন করবেন?
পশ্চিমা কোন ভিন্নধর্মীর ল্যাবে জন্ম নেওয়া মেডিটেশন না নবী রাসূলগণের উদ্ভাবিত ও ওলীগণের অনুশীলনকৃত মোরাক্বাবা।
আপনার শিক্ষক কে হওয়া উচিত?
কোচিং সেন্টারের মত গজে উঠা প্রচলিত সাইন্টিফিক মেডিটেশনের প্রশিক্ষক না প্রচলিত ত্বরীকার কোন হাদী যিনি আধ্যাত্মিক সাধক এবং যিনি কোন আধ্যাত্মিক সিলসিলার ধারক ও বাহক।
চেষ্টা নয়, তক্দির হচ্ছে গন্তব্য পথঃ
আপনি মোটেই হতে পারেন না যুগসষ্ট্রা বিজ্ঞানী, কালজয়ী চিকিৎসক, যুগের অভিযাত্রী, অমর কথাশিল্পী, জনপ্রিয় অভিনেতা, খ্যাতিমান খেলোয়াড়, সফল শিল্পপতি, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, দক্ষ প্রশাসক, মহান বিপ্লবী নেতা, আত্মজয়ী বীর, বরেণ্য ধর্মবেত্তা, সূফি-দরবেশ, ওলী-আউলিয়া, কালজয়ী আধ্যাত্মিক সাধক স্রষ্টার ইচ্ছা ব্যতিরেকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাইন্টিফিক মেডিটেশনের প্রবক্তাগণ বলেন যে, আপনি নিজেই হতে পারেন আপনার তকদ্বীরের স্রষ্টা, এ ধরণের কথায় বিশ্বাসীগণ ধর্মচ্যুতির নামান্তর ছাড়া আর কিছুই নন। কারন আমাদের ব্যাপক বিশ্বাস বা ঈমানে মুফাচ্ছাল হচ্ছেঃ আল্লাহ্ তা’আলা এবং তাঁর ফেরেস্তাগণ ও কিতাব সমুহ, রাসূলগণ, পরকাল, তক্বদ্বীরের ভাল-মন্দ (ভাল-মন্দ, জান্নাত-জাহান্নাম আল্লাহর তরফ হতে নির্দ্ধারিত) এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের প্রতি আমি বিশ্বাস স্থাপন করলাম। পবিত্র আল্ কোরআনে তক্বদ্বীর বিষয়ে বিরান্নব্বইটি আয়াত রয়েছে, ৩টি উল্লেখ করা হল। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ তোমরা অগ্রে ধাবিত হও তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে, যা আকাশ ও পৃথিবীর মত প্রশস্ত। এটা প্রস্ত্তত করা হয়েছে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারীদের জন্য। এটা (জান্নাত) আল্লাহর কৃপা, তিনি যাকে ইচ্ছা, এটা (জান্নাত) দান করেন। আল্লাহ্ মহান কৃপার অধিকারী (আল্-ক্বোরআন ৫৭:২১)। পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর কোন বিপদ আসে না; কিন্তু তা জগত সৃষ্টির বহু পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। নিশ্চয়ই এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ (আল্-ক্বোরআন ৫৭:২২)। অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ আমার প্রেরিত বান্দাদের ব্যাপারে আমার সিদ্ধান্ত পূর্বেই স্থির হয়ে গেছে (আল্-ক্বোরআনঃ ৩৭:১৭১)। মানব জন্মের পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে প্রতিটি বিষয়ে স্রষ্টা তক্বদ্বীর নির্ধারিত করে রেখেছেন যা সম্পূর্ণভাবে অলংঘনীয় শুধু একটি পথ ব্যতিরেকে। মহান আল্লাহ্ তা’আলা হচ্ছেন মহাকৌশলী আর সমগ্র মানব মন্ডলী আল্লাহর প্রতিনিধি যার মধ্য থেকে নেতৃত্বের জন্য নির্বাচিত নবী রাসূল ও ওলী-আল্লাহগণ হচ্ছেন আল্লাহর নিযুক্ত কৌশলী এবং তাঁরা আল্লাহর প্রদত্ত শক্তিতে শক্তিমান। তাঁরাই হচ্ছেন প্রকৃত ইনসানে কামেল।
নবী রাসূল, ওলী-আল্লাহ বুযুর্গ ব্যক্তিদের নিকট সাধারণ মানুষ উপদেশ ও সাহায্যের জন্য যাওয়া তা চিরাচরিত ও প্রাকৃতিক। আর ইনসানে কামেলগণ তাদের ফারাসাত বা অর্ন্তচক্ষু দ্বারা স্রষ্টা কর্তৃক নির্ধারিত তথ্যভান্ডার দেখে তাদের বিষয়াদি কিভাবে সম্পন্ন করা যায় তা বলে দিতেন এবং সাহায্য সহযোগিতা করতেন। এভাবেই যুগে যুগে কালে কালে নবী-রাসূল, ওলী-বুযুর্গ, সুফী দরবেশ, সাধূ সন্ন্যাসী এবং ঋষি-মুনিগণ স্রষ্টা প্রদত্ত ক্ষমতায় বলীয়ান হয়ে সাধারণ মানুষের সকল বিষয়ে সাহায্য সহযোগিতা করতেন।
নবী-রাসূল, ওলী-বুযুর্গ, সুফী দরবেশ, সাধূ সন্ন্যাসী এবং ঋষি-মুনিগণ জন্মের পূর্বে অন্যান্য জ্ঞানী পন্ডিত ব্যাক্তিরা জানতে পারতেন অমুক অঞ্চলে এ যুগের শ্রেষ্ঠ মানব জন্ম নিবে তাই অনেক পন্ডিতগণ হযরত ঈসা এবং হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর জন্মের পূর্বে তা জেনেছিলেন। অনেক খ্রীষ্টান পন্ডিতগণ হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর জন্মের পুর্বে তাঁর জন্মের বিষয় অবগত হয়ে তাঁর চাচা আবু তালেবের নিকট এসেছিলেন তাঁকে দেখতে। তদ্রুপ ওলী-বুযুর্গ ব্যক্তিগণের তক্বদ্বীরও জন্মের পূর্বে নির্ধারিত। হযরত শ্যায়খ ছৈয়দ আবদুল কাদের জিলানী মাতৃগর্ভে আসার সাথে সাথে তার মা স্বপ্নে দেখেছেন যে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এসে তাকে বললেন তোমার গর্ভে একজন যুগশ্রেষ্ঠ ওলী-আল্লাহ্ তশরীফ এনেছেন। বুযুর্গ ঋষিরা যে সুপারম্যানের শক্তি অর্জন করেছিলেন তা অর্জিত হয়নি সাধনার এক দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় বরং তা অর্জিত হয়েছিল তক্বদ্বীর দ্বারা যা জন্মের বহু আগে পূর্ব নির্ধারিত। সাধনার দ্বারা তকদ্বীরে নির্ধারিত বিষয়টির প্রকাশ লাভ করে মাত্র, চূড়ান্ত সফলতা আসে না যদি না তকদ্বীরে নির্ধারিত থাকে।
তা হলে কেন ইনসানে কামেলের কাছে যাবেন?
ইনসানে কামিলগণ আল্লাহ্ হতে প্রাপ্ত ক্ষমতায় তক্বদ্বীরগতভাবে জাহান্নামীকে জান্নাতীতে পরিণত করেছেন যার প্রমাণ বিভিন্ন তাফসীরে রয়েছে। তাঁরা আল্লাহ্ কর্তৃক নিযুক্ত কৌশলী তাই তারা আল্লাহর গুনে গুনান্বিত হয়ে আল্লাহ্ হতে প্রাপ্ত ক্ষমতায় মৃতকে জীবিত, নিঃসন্তানকে সন্তানদান, অসুস্থকে সুস্থ, দুঃখকে আনন্দে, অভাবকে প্রাচুর্যে, অশান্তিকে প্রশান্তিতে, অপবিত্রকে পবিত্র, দূর্ভাগ্যকে সৌভাগ্যে পরিণত করেছেন। যেহেতু ইনসানে কামিলগণ আল্লাহ্ হতে প্রাপ্ত ক্ষমতায় ক্ষমতাবান সেহেতু যে কোন বিষয়ে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা ও সুপারিশ করতে পারেন, অন্যদিকে তথ্যভান্ডার হতে তথ্য জেনে মানুষকে সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। ব্যক্তি সেই নির্ধারিত পথে যদি চেষ্টা ও সাধনা করে তাহলে তার পক্ষে সফলতা অর্জন সম্ভব। না জেনে না দেখে পথ চলা জ্ঞানীদের কাজ নয়। আমরা যত বেশী সচেতন হতে পারি ততই আমরা আমাদের তথ্যভান্ডারকে জানতে পারি ও সমৃদ্ধ করতে পারি। মনের অসীম শক্তিকে সচেতন করে মনকে কেন্দ্রীভূত করা আমাদের জীবনের সর্বাপেক্ষা উত্তম কাজ। এ লেভেলেই পৃথিবীর সকল দক্ষ মানুষ কাজ করে থাকেন। মনকে কেন্দ্রীভূত করার সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতিই সূফি মেডিটেশন। সূফি মেডিটেশন এর প্রাথমিক কোর্সে আপনার বিশাল অতীন্দ্রিয় সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত হবে।
সূফি মেডিটেশন এর মাধ্যমে যা অর্জন করা সম্ভবঃ
- দুশ্চিন্তা বা টেনশন হতে মুক্তির প্রক্রিয়া
- আত্ম নিরাময়ের আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া
- স্মৃতিশক্তি ও মেধাশক্তিকে উন্নত করার প্রক্রিয়া
- দেহ ও মনকে নিয়ন্ত্রনের প্রক্রিয়া
- সালাত সহ সকল এবাদতে একাগ্রতা ও স্থিরতা আনয়নের প্রক্রিয়া
- কুপ্রবৃত্তি দমন ও আত্মশুদ্ধি লাভের প্রক্রিয়া
- লতিফা সমুহ জাগ্রত করার প্রক্রিয়া
- তওবা করে বিনীত হওয়ার সঠিক প্রক্রিয়া
- বদ অভ্যাস ও নেশা দূরিকরণের প্রক্রিয়া
- ধ্যানে অন্যকে নিয়ন্ত্রেনের প্রক্রিয়া
- ধ্যানে তথ্যভান্ডার হতে নিজের ভাল মন্দ জানার প্রক্রিয়া
- দ্রুত ধ্যানের গভীর অবস্থায় পৌছার প্রক্রিয়া
- সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়া
- সুলতানুল আজকার বা সর্বাঙ্গে জিকির চালু করার প্রক্রিয়া
- ঊরূজ বিল বোরাকি বা নাফসে আম্মারাকে বোরাক শক্তির মাধ্যমে শাওকি নালের মধ্য দিয়ে আখফা লতিফায় উত্তোলন করে রূহুল কুদ্দস বা অনন্তচেতনায় উন্নীতকরণ।
- ফারাসাত বা অর্ন্তচক্ষু হাসিল করার প্রক্রিয়া
- মন, আত্মা ও আধ্যাত্মিকতা (Trinity) একত্রিত করে স্থান, কাল এবং সময়কে অতিক্রম করার প্রক্রিয়া।
- মন ও আত্মাকে প্রশান্ত করার প্রক্রিয়া