আধ্যাত্মিক বিজ্ঞানই মোরাক্বাবা বা সূফি মেডিটেশনঃ
তাসাউফ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পর ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশে সূফী মেডিটেশন শুরু করে তাসাউফ ফাউন্ডেশন। আলহাদী সৈয়দ শাহাদাত হুসাইন এর যোগ্য নেতৃত্বে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৭৬ টি বেসিক কোর্স পরিচালিত হয় । আমাদের বেসিক কোর্সের আসন সংখ্যা ৫০ সেহেতু প্রায় ৩৮০০ অংশগ্রহনকারী এই পর্যন্ত আমাদের সূফী মেডিটেশন কোর্সে অংশগ্রহন করেছেন যা তথ্য ও ভিডিও চিত্র আমাদের নিকট রয়েছে।
বর্তমান যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সাইন্টিফিক মেডিটেশন এর নামে যা করা হচ্ছে তা কোন নবী, ওলী-বুযুর্গ বা সূফীরা করে নাই। পৃথিবীর আদিতে আদম (আঃ) হতে শুরু করে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) পর্যন্ত একলক্ষ চবিবশ হাজার নবী রাসূলগণ যা করেছেন তা হচ্ছে মোরাক্বাবা, ক্বোরআন হাদীস সমর্থিত ধ্যানের পদ্ধতি যা তাহাননুস পদ্ধতির মোরাক্বাবা নামে পরিচিত। যুগে যুগে কালে কালে সকল নবী রাসূল ওলী বুযুর্গ, সূফী দরবেশগণ এই পদ্ধতির ধারক ও বাহক ছিলেন। তাঁরা যে প্রক্রিয়ায় মোরাক্বাবা করেছেন তা হচ্ছে সূফি মেডিটেশন। যারা এই মোরাক্বাবার শিক্ষক বা হাদী তারা রাসূল মুহাম্মদ (সঃ) পর্যন্ত সিলসিলাভুক্ত (শিকলের মত একটির সাথে আরেকটি সংযুক্ত) হবেন এবং সিরাজাম মুনিরার বাহক হবেন। এই হাদীগণ শরীয়ত ও আধ্যাত্মিক বিদ্যায় উত্তরাধিকারী ও প্রজ্ঞাবান হবেন। প্রচলিত সাইন্টিফিক মেডিটেশন যাদের দ্বারা পরিচালিত তারা কোন ধর্মবেত্তা নন এবং আধ্যাত্মিক সাধকও নন ফলে ধর্মানুরাগীদের জন্য এ ধরণের প্রচলিত মেডিটেশন এর পরিচালকগণ হাতুড়ে ডাক্তারদের মত যাদের হাতে চিকিৎসা নিরাপদ নয়। মানুষের মন কল্পনাপ্রবণ বিধায় প্রতিদিন হাজার হাজার ছবি ধারণ করে যা ধ্যানের পক্ষে অন্তরায়। মোরাক্বাবার অন্যতম কাজ হচ্ছে মনকে একদিকে কেন্দ্রিভূত করা, একাগ্রচিত্ত করা, সকল ছবি মুছে মনকে স্রষ্টার নূরে আলোকিত করা। পক্ষান্তরে সাইন্টিফিক মেডিটেশন কল্পনা প্রবণ মনকে আরো কল্পনার দিকে ধাবিত করে, ফলে তারা তৈরী করতে থাকে বাস্তবতা বিবর্জিত ক্ষণস্থায়ী এক কল্পনার রাজ্য মনের বাড়ী যা কল্পনাতেই নিঃশেষ হয়ে যায়, তাসের ঘরের মত যা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। যে প্রক্রিয়ায় সাইন্টিফিক মেডিটেশন পরিচালিত হচ্ছে সে প্রক্রিয়ায় কখনো ধ্যানে অগ্রগামী হওয়া যাবে না উপরন্তু মনে ধ্যানের প্রতি বিরক্তি এসে ধ্যান সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তার উদ্ভব হবে, ফলশ্রুতিতে মানুষ চিরতরে ধ্যান হতে বের হয়ে যাবে যা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। বিশ্বব্যাপী প্রচলিত এসব সাইন্টিফিক প্রক্রিয়ায় মনের একাগ্রতা কখনো সম্ভব নয়। সূফি মেডিটেশন যা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে হাজার বছর ধরে আধ্যাত্মিক সাধকরা চর্চা করে যাচ্ছেন এবং জাগতিক ও আধ্যাত্মিক সফলতা অর্জন করেছেন যার প্রমান বিভিন্ন কিতাবে রয়েছে। তাই সূফিমেডিটেশনই হতে পারে আপনার জীবনের সাধনার একমাত্র পথ।
সূফী মেডিটেশন
তাসাউফ ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত সূফী মেডিটেশন তিন দিনের বেসিক কোর্স। সূফি মেডিটেশনের উদ্দেশ্য হচ্ছে আত্মদর্শনের মাধ্যমে সত্যদর্শন, নিজেকে চেনার মাধ্যমে আল্লাহ্কে চেনা, নিজেকে আল্লাহ্তে সমর্পণ করা, আত্মজ্ঞান লাভ করা, নিজের মধ্যে যে আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে তা উদঘাটিত করে দেহের মধ্যে স্রষ্টার নিদর্শণ সমুহের পরিচয় জেনে নিজের অস্তিত্বে (আলমে কবির) বিশ্বজগতকে (আলমে ছগীর) দেখা, চেতনা শক্তিকে জাগ্রত করে জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার সংযোগ স্থাপন করে স্রষ্টার সংযোগ লাভ করা, আর এসব জ্ঞান অর্জন করাই হচ্ছে তাসাউফ এবং এসব লাভ করার প্রক্রিয়াই হচ্ছে সূফী মেডিটেশন।
সূফী মেডিটেশন এর মাধ্যমে জানতে পারবেন কুপ্রবৃত্তি দমন ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি লাভের কৌশল বা নাফসে্র পবিত্রতা অর্জন করা, মনের পবিত্রতা হাসিলের আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া শিখা তথা সিরাজাম মুনিরা গ্রহনে আত্মিক পবিত্রতা অর্জন, মনকে এককেন্দ্রিক করে মনের অস্থিরতা দূরীকরণ করে আত্মাকে প্রশান্ত করা, মন ও আত্মার একত্রিকরন, নেতিবাচক চিন্তাকে ইতিবাচক চিন্তায় পরিণত করার প্রক্রিয়া, আত্মবিশ্বাসী হওয়ার কৌশল, মানসিক ও শারীরিক রোগ নিরাময়ে মেডিটেশন ও হিলিং প্রক্রিয়া শিখে রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময় করা, সময় জ্ঞান অর্জন করে শুভ সময়ে শুভ কাজ সম্পন্ন করে দূর্ভাগ্যকে পরাজিত করা। মানব দেহের চৌদ্দটি আধ্যাত্মিক ষ্টেশনের পরিচিতি লাভ, আত্মদর্শন ও নিজের মাঝে বিশ্বজগতকে আবিস্কার করা, আফাকে ও আনফাসে আল্লাহর আয়াত তথা নিদর্শন সমুহ নিয়ে গভীর চিন্তা বা তাফাক্কুরের বিভিন্ন কৌশল, নাফসে আম্মারাহকে নাফসে মুত্বমাইন্নায় উন্নীত করন, অন্তর আলোকিত করা তথা মোরাক্বাবায়ে নূর দর্শন, মেডিটেশন এবং রিফ্লেক্সশন সংক্রান্ত কৌশল শিখা। পাস-আনফাস যিকিরের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাস বা বায়ু নিয়ন্ত্রনের সকল প্রক্রিয়া (Breathe Control), প্রত্যেক লতিফায় পাস আনফাস জিকিরের প্রক্রিয়া, হিফজে দম (Breathe Holding) ও সুলতানুল আজকার (সর্বাঙ্গে জিকির) ইত্যাদি প্রক্রিয়া শিক্ষা দেয়া হয়। স্রস্টার প্রতিনিধি হিসাবে নিজের সসীম গুণাবলীকে অসীমে রূপান্তরিত করে সার্বজনীন হওয়ার প্রক্রিয়া, এবাদাতে একাগ্রতা, বিনয়তা ও প্রেম অর্জনের কৌশল, ধ্যানই একাগ্রতা অর্জনের কৌশল যা এবাদতের মূল। সূফী মেডিটেশন মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং আধ্যাত্মিক আলোতে আলোকিত করে, নিজেকে আল্লাহ্তে সমর্পণ করা যায়, ফারাসাত Intuition (অর্ন্তচক্ষু) হাসিলের প্রক্রিয়া শিখে প্রজ্ঞা অবতরণের ক্ষেত্র তৈরী করা যায়।