বিষয়ঃ আলিমুল গায়েব হচ্ছেন আল্লাহ
সম্পাদনাঃ সৈয়দ শাহাদাত হুসাইন
পবিত্র ক্বোরআন শরীফে গায়েব শব্দটি ৩৫টি সূরায় ৫৯ আয়াতে ৬০ বার রয়েছে। আমি ৫৯টি আয়াতকে একত্রিত করে বিষয় ভিত্তিক ভাবে সাজিয়ে উপস্থাপন করলাম, যাতে বিদগ্ধ পাঠক আল্লাহর দেয়া সিদ্ধান্ত অবলোকন ও উপলদ্ধি করতে সক্ষম হয়। বিষয়টি পরিস্কার করার জন্য প্রজ্ঞা ও এলহামের দুটি আয়াত যথাক্রমে ৯১:৮ ও ২:২৬৯ সহ ৬১ আয়াত এবং ভুমিকায় ২ আয়াত সহ ৬৩ টি আয়াত এখানে উপস্থাপন করেছি।
বিষয়ের নামকরণ ব্যতীত আয়াত সমুহ হুবহু পেশ করেছি যাতে সবসময় সকল মানুষের চিন্তার সুযোগ উন্মুক্ত থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমি তো আপনার প্রতি ক্বোরআন (কিতাব) নাযিল করেছি এ উদ্দেশ্যে যে, আপনি সুস্পষ্টভাবে তাদেরকে বুঝিয়ে দেবেন যে বিষয়ে তারা মতভেদ করে এবং এটা বিশ্বাসী লোকদের জন্য হেদায়াত ও রহমতস্বরূপ (সূত্রঃ আল্-ক্বোরআন ১৬:৬৪)।
আল্লাহ তাআলা প্রতিটি বিষয় বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন: আর আমি প্রতিটি বিষয়কে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি (সূত্র: আল ক্বোরআন ১৭:১২)।
তাই গায়েবের আয়াত সমুহ একত্রিত করে উপস্থাপন করলাম যেন মানুষ নিজের ভ্রান্ত ধারণা দূর করে স্বীয়জ্ঞানে আল্লাহর সিদ্ধান্ত মানতে পারে।
বিষয়ঃ আল্লাহর প্রতি বিলগায়েব বিশ্বাস বা না দেখে বিশ্বাসই ঈমানঃ (আয়াত ৮ টি)
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ যারা অদেখা (বিলগায়েব) বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদেরকে যে রুযী দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে, সূত্র: আল্ ক্বোরআন ২:৩।
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ তোমাদেরকে এমন কিছু শিকারের মাধ্যমে পরীক্ষা করবেন, যে শিকার পর্যন্ত তোমাদের হাত ও বর্শা সহজেই পৌছতে পারবে- যাতে আল্লাহ বুঝতে পারেন যে, কে তাকে অদৃশ্যভাবে (বিলগায়েব বা না দেখে) ভয়করে। অতএব, যে ব্যক্তি এরপর সীমা অতিক্রম করবে, তার জন্য যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি রয়েছে, সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৫:৯৪।
যারা না দেখেই (বিলগায়েব) তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে এবং কেয়ামতের ভয়ে শঙ্কিত, সূত্র: আল্ ক্বোরআন ২১:৪৯।
কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কেউ যদি তার গুরুতর ভার বহন করতে অন্যকে আহবান করে কেউ তা বহন করবে না- যদি সে নিকটবর্তী আত্নীয়ও হয়। আপনি কেবল তাদেরকে সতর্ক করেন, যারা তাদের পালনকর্তাকে না দেখেও (বিলগায়েব) ভয় করে এবং সালাত কায়েম করে। যে কেউ নিজের সংশোধন করে, সে সংশোধন করে, স্বীয় কল্যাণের জন্যেই আল্লাহর নিকটই সকলের প্রত্যাবর্তন, সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৩৫:১৮।
আপনি কেবল তাদেরকেই সতর্ক করতে পারেন, যারা উপদেশ অনুসরণ করে এবং দয়াময় আল্লাহকে না দেখে ভয় (বিলগায়েব) করে। অতএব আপনি তাদেরকে সুসংবাদ দিয়ে দিন ক্ষমা ও সম্মানজনক পুরস্কারের, সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৩৬:১১।
যে না দেখে (বিলগায়েব) দয়াময় আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করত এবং বিনীত অন্তরে উপস্থিত হত, সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৫০:৩৩।
আমি আমার রসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি নাযিল করেছি লৌহ, যাতে আছে প্রচন্ড রণশক্তি এবং মানুষের বহুবিধ উপকার। এটা এজন্যে যে, আল্লাহ জেনে নিবেন কে না দেখে (বিলগায়েব) তাঁকে (আল্লাহ) ও তাঁর রসূলগণকে সাহায্য করে। আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৫৭:২৫।
নিশ্চয় যারা তাদের পালনকর্তাকে না দেখে (বিলগায়েব) ভয় করে, তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার, সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৬৭:১২।
বিষয়ঃ আল্লাহ হচ্ছেন ‘আ-লিমুল গাইব বা গায়েবের মূল সত্ত্বাঃ (আয়াত ১৭ টি)
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ আর তিনিই যথাযথভাবে আসমানসূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। যেদিন তিনি বলবেনঃ হয়ে যা, তখনই তা হয়ে যাবে। তাঁর কথাই সত্য। যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার করা হবে, সেদিনের সর্বময় কর্তৃত্ব একমাত্র তাঁরই। তিনি সকল অদৃশ্য (গায়েব) বিষয়ে এবং প্রত্যক্ষ বিষয়ে জ্ঞাত। তিনিই প্রজ্ঞাময়, সর্ববিষয়ে খবর রাখেন, সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৬:৭৩।
আর আল্লাহর কাছেই আছে আসমান ও যমীনের অদৃশ্যের (গায়েবের) তথ্য; আর সকল কাজের প্রত্যাবর্তন তাঁরই দিকে; অতএব, তাঁরই বন্দেগী কর এবং তাঁর উপর ভরসা রাখ, আর তোমাদের কার্যকলাপ সম্বন্ধে তোমার পালনকর্তা কিন্তু বে-খবর নন সূত্র: আল্ ক্বোরআন ১১:১২৩।
তারা কি জেনে নেয়নি যে, আল্লাহ তাদের রহস্য ও শলা-পরামর্শ সম্পর্কে অবগত এবং আল্লাহ খুব ভাল করেই জানেন সমস্ত গোপন (গায়েব) বিষয়, সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৯:৭৮?
হে নাবী আপনি বলে দিনঃ তোমরা কাজ (আমল) করে যাও। তারপর আল্লাহ্ দেখবেন তোমাদের কাজ (আমল) এবং তাঁর রাসূল ও মু’মিনগণও (আমল) দেখবে। অতঃপর তোমাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে গোপন (গায়েব) ও প্রকাশ্যের পরিজ্ঞাতা আল্লাহর কাছে, তখন তিনি তোমাদের জানিয়ে দেবেন যা তোমরা করতে সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৯:১০৫।
আর তারা বলেঃ “কেন নাযিল করা হয় না তার উপর কোন আয়াত তার রবের তরফ থেকে?” আপনি বলে দিনঃ “গায়েবের খবর তো কেবল আল্লাহরই আছে। সুতরাং তোমরা প্রতীক্ষায় থাক, আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষায় রইলাম, সূত্র: আল্ ক্বোরআন ১০:২০।
তিনি সকল গুপ্ত (গায়েব) ও প্রকাশ্য বিষয় জ্ঞাত আছেন। তিনি সুমহান, সর্বোচ্চ মর্যাদাবান সূত্র: আল্ ক্বোরআন ১৩:৯।
আসমান ও জমিনের যাবতীয় গুপ্ত (গায়েব) বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহরই এবং কেয়ামতের ব্যাপারে তো চোখের পলকের ন্যায়, বরং তার চেয়েও দ্রুততর। নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান, সূত্র: আল্ ক্বোরআন ১৬:৭৭।
বলুনঃ তারা কতকাল অবস্থান করেছে, তা আল্লাহই ভাল জানেন। নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের অদৃশ্য (গায়েব) বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই কাছে রয়েছে। তিনি কত চমৎকার দেখেন ও শোনেন। তিনি ব্যতীত তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। তিনি কাউকে নিজ কর্তৃত্বে শরীক করেন না, সূত্র: আল্ ক্বোরআন ১৮:২৬।
তিনি পরিজ্ঞাতা অদৃশ্যের (গায়েবের) ও প্রকাশ্যের, আর তারা যা {(পরম (জাত) এ)} শরীক করে তিনি তার বহু ঊর্ধ্বে সূত্র: আল্ ক্বোরআন ২৩:৯২।
তিনিই অদৃশ্য (গায়েব) ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৩২:৬।
বলুনঃ নিশ্চয় আমার রব সত্য নিক্ষেপ করেন। তিনি আলেমুল গায়ব বা গায়েবী বিষয় পরিজ্ঞাত, সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৩৪:৪৮।
আল্লাহ আসমান ও যমীনের অদৃশ্য (গায়েব) বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত। তিনি অন্তরের বিষয় সম্পর্কেও সবিশেষ অবহিত, সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৩৫:৩৮।
বলুন, হে আল্লাহ, আসমান ও যমীনের স্রষ্টা, গুপ্ত ও প্রকাশ্য বিষয়ের জ্ঞাতা, আপনিই আপনার বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা করবেন, যে বিষয়ে তারা মত বিরোধ করত সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৩৯:৪৬।
নিশ্চয় আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের অদৃশ্য (গায়েব) বিষয় জানেন, তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখেন, সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৪৯:১৮।
তিনিই আল্লাহ তা’আলা, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই; তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যকে (গায়েব) জানেন তিনি পরম দয়ালু, অসীম দাতা সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৫৯:২২।
বলুনঃ যে মৃত্যু থেকে তোমরা পালিয়ে বেড়াও তা একদিন তোমাদেরকে এসে পাকড়াও করবেই। তারপর তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে অদৃশ্য (গায়েব) ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা আল্লাহর সমীপে এবং তোমাদেরকে জানিয়ে দেয়া হবে সে সব কিছু, যা তোমরা করতে, সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৬২:৮।
তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যের (গায়েবের) জ্ঞানী, পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময় সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৬৪:১৮।
বিষয়ঃ আল্লাহ নিজ তরফ থেকে গায়েব না জানালে কেউ জানতে পারে নাঃ (আয়াত ১০ টি)
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ যেদিন আল্লাহ সব পয়গম্বরকে একত্রিত করবেন, অতঃপর বলবেন তোমরা কি উত্তর পেয়েছিলে? তাঁরা বলবেনঃ আমরা অবগত নই, আপনিই অদৃশ্য (গায়েব) বিষয়ে মহাজ্ঞানী সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৫:১০৯।
যখন আল্লাহ বললেনঃ হে ঈসা ইবনে মরিয়ম! তুমি কি লোকদেরকে বলে দিয়েছিলে যে, আল্লাহকে ছেড়ে আমাকে ও আমার মাতাকে উপাস্য সাব্যস্ত কর? ঈসা বলবেন; আপনি পবিত্র! আমার জন্যে শোভা পায় না যে, আমি এমন কথা বলি, যা বলার কোন অধিকার আমার নেই। যদি আমি বলে থাকি, তবে আপনি অবশ্যই পরিজ্ঞাত; আপনি তো জানেন যা আছে আমার মনে, কিন্তু আমি তো জানি না আপনার মনে যা আছে। নিশ্চয় আপনিই অদৃশ্য (গায়েব) বিষয়ে জ্ঞাত সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৫:১১৬।
আপনি বলে দিনঃ আমি আমার নিজের জন্য কোন উপকারের ক্ষমতা রাখি না, আর না কোন অপকারের, তবে আল্লাহ্ যা ইচ্ছে করেন তা ছাড়া। আর আমি যদি অদৃশ্যের (গায়েব) কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম, ফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনও হতে পারত না। আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা ঈমানদারদের জন্য সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৭:১৮৮।
আর আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার রয়েছে এবং একথাও বলি না যে, আমি অদৃশ্য (গায়েব) খবরও জানি; একথাও বলি না যে, আমি একজন ফেরেশতা; আর তোমাদের দৃষ্টিতে যারা লাঞ্ছিত আল্লাহ তাদের কোন কল্যাণ দান করবেন না। তাদের মনের কথা আল্লাহ ভাল করেই জানেন। সুতরাং এমন কথা বললে আমি অন্যায় কারী হব সূত্র: আল্ ক্বোরআন ১১:৩১।
তোমরা তোমাদের পিতার কাছে ফিরে যাও এবং বলঃ পিতা আপনার ছেলে চুরি করেছে। আমরা তাই বলে দিলাম, যা আমাদের জানা ছিল এবং অদৃশ্য (গায়েব) বিষয়ের প্রতি আমাদের লক্ষ্য ছিল না সূত্র: আল্ ক্বোরআন ১২:৮১।
সে কি অদৃশ্য (গায়েব) বিষয় জেনে ফেলেছে, অথবা দয়াময় আল্লাহর নিকট থেকে কোন প্রতিশ্রুতি প্রাপ্ত হয়েছে? সূত্র: আল্ ক্বোরআন ১৯:৭৮।
বলুন, আল্লাহ ব্যতীত নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে কেউ অদৃশ্যের (গায়বের) খবর জানে না এবং তারা জানে না যে, তারা কখন পুনরুজ্জীবিত হবে সূত্র: আল্ ক্বোরআন ২৭:৬৫।
অথবা তাদের কাছে কি অদৃশ্য (গায়েবী) জ্ঞান আছে যে, তারা তা লিখে রাখে সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৫২:৪১?
তার কাছে কি অদৃশ্যের (গায়েবের) জ্ঞান আছে যে, সে তা দেখছে, সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৫৩:৩৫?
অথবা তাদের কাছে কি অদৃশ্যের (গায়েবের) জ্ঞান আছে যা তারা লিখে রাখে, সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৬৮:৪৭?
বিষয়ঃ জ্বিনেরাও গায়েব জানেনাঃ (আয়াত ১ টি)
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ যখন আমি সোলায়মানের মৃত্যু ঘটালাম, তখন ঘুণ পোকাই জিনদেরকে তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে অবহিত করল। সোলায়মানের লাঠি খেয়ে যাচ্ছিল। যখন তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন, তখন জিনেরা বুঝতে পারল যে, অদৃশ্য (গায়েবের) বিষয়ের জ্ঞান থাকলে তারা এই লাঞ্ছনাপূর্ণ শাস্তিতে আবদ্ধ থাকতো না সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৩৪:১৪।
বিষয়ঃ আল্লাহ গায়েব জানাতে কৃপণতা করেন না (আয়াত ১ টি)
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ তিনি (আল্লাহ) অদৃশ্য (গায়েবের) বিষয় বলতে কৃপনতা করেন না সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৮১:২৪।
বিষয়ঃ গায়েবের বিষয় প্রকাশ্য গ্রন্থ আল ক্বোরআনে মওজুদ রয়েছেঃ (আয়াত ৩ টি)
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ তাঁর কাছেই অদৃশ্য (গায়েব) জগতের চাবি রয়েছে। এ গুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। স্থলে ও জলে যা আছে, তিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে না; কিন্তু তিনি তা জানেন। কোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুস্ক দ্রব্য পতিত হয় না; কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৬:৫৯।
আকাশ ও পৃথিবীতে এমন কোন গোপন (গায়েব) বিষয় নেই, যার উল্লেখ সুস্পষ্ট ক্বোরআনে না আছে, সূত্রঃ আল্-ক্বোরআন ২৭:৭৫।
কাফেররা বলে আমাদের উপর কেয়ামত আসবে না। আপনি বলে দিন; কেন আসবে না? আমার পালনকর্তার শপথ- অবশ্যই আসবে। তিনি অদৃশ্য (গায়েব) সম্পর্কে জ্ঞাত। নভোমন্ডলে ও ভূ-মন্ডলে রেণু পরিমাণ বস্তুও তার অগোচরে নয়, কিংবা তদপেক্ষ ক্ষুদ্রও নেই এবং বৃহৎও নেই, কিন্তু এ সবই সুষ্পষ্ট কিতাবে আছে, সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৩৪:৩।
বিষয়ঃ গায়েব জানানোর মাধ্যম হচ্ছে ওহী, এলহাম ও প্রজ্ঞাঃ (আয়াত ৬ টি)
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ এসব হল গায়েবী সংবাদ যা আমি আপনাকে ওহীর মাধ্যমে জানাই। আর আপনি তো তাদের কাছে ছিলেন না যখন তারা নিজ নিজ কলম নিক্ষেপ করছিল এ উদ্দেশ্যে যে, তাদের মধ্য থেকে মরিয়মের অভিভাবক কে হবে তা নির্ধারণ করতে। তারা যখন নিজেরা বাদানুবাদ করছিল তখনও আপনি তাদের কাছে ছিলেন না, সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৩:৪৪।
আপনি বলুনঃ আমি তোমাদের একথা বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ধনভান্ডার আছে। তাছাড়া আমি অদৃশ্য বিষয় অবগতও নই। আমি এমন বলি না যে, আমি ফেরেশতা। আমি তো শুধু ঐ ওহীর (গায়েব) অনুসরণ করি, যা আমার কাছে আসে। আপনি বলে দিনঃ অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে? তোমরা কি চিন্তা কর না সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৬:৫০
এটি অদৃশ্যের (গায়বের) খবর, যা আমি আপনাকে ওহীর মাধ্যমে আপনাকে জানাচ্ছি। এসব ইতিপূর্বে না আপনি জানতেন আর না আপনার কওমের লোকেরা জানত। অতএব ধৈর্য ধারণ করুন। নিশ্চয় শুভ পরিণাম মোত্তাকীদেরই জন্য, সূত্র: আল্ ক্বোরআন ১১:৪৯।
এগুলো অদৃশ্যের খবর, আমি আপনার কাছে ওহী প্রেরণ করি। আপনি তাদের কাছে ছিলেন না, যখন তারা স্বীয় কাজ সাব্যস্ত করছিল এবং চক্রান্ত করছিল সূত্র: আল্ ক্বোরআন ১২:১০২।
তিনি যাকে ইচ্ছে প্রজ্ঞা দান করেন এবং যাকে প্রজ্ঞা প্রদান করা হয় সে তো প্রচুর কল্যাণ প্রাপ্ত হয়। জ্ঞানবানরা ছাড়া কেউ যিকির গ্রহণ করে না, সূত্রঃ আল্-ক্বোরআন ২:২৬৯।
অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের ইলহাম (জ্ঞাত) করেছেন; সূত্রঃ আল্-ক্বোরআন ৯১:৮।
বিষয়ঃ জান্নাত যা গায়েবের অন্তর্ভুক্ত যা তিনি ওহীর মাধ্যমে দিয়েছেনঃ (আয়াত ১ টি)
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ সেই স্থায়ী জান্নাতে, যার প্রতিশ্রুতি দয়াময় আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের অদৃশ্যাভাবে (গায়েবে) দিয়েছেন। নিশ্চয় তাঁর ওয়াদা অবশ্যম্ভাবী, সূত্রঃ আল্-ক্বোরআন ১৯:৬১।
বিষয়ঃ নবী রাসূলগণ গায়েবের মালিক নন তবে নবী রাসূলগণকে কে আল্লাহ গায়েবের বিষয় জানিয়ে দেনঃ (আয়াত ৩ টি)
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ আল্লাহ মু‘মিনদের এ অবস্থায় রাখতে চান না, যে অবস্থায় তোমরা এখন আছ, যতক্ষণ পর্যন্ত না অপবিত্রকে পৃথক করেন পবিত্র থেকে। আর আল্লাহ্ এমন নন যে, তিনি তোমাদের গায়েবের সংবাদ দেবেন। তবে আল্লাহ্ তাঁর রাসূলদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে অদৃশ্যের (গায়েবের) সংবাদ দেন। সুতরাং তোমরা ঈমান আন আল্লাহর উপর এবং তাঁর রাসূলদের উপর। যদি তোমরা ঈমান আন এবং মোত্তাকী হও, তবে তোমাদের জন্য রয়েছে বিরাট প্রতিদান সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৩:১৭৯।
তারা তোমাদের কাছে ওযর পেশ করবে যখন তোমরা তাদের কাছে ফিরে আসবে। (হে নাবী) আপনি বলে দিনঃ তোমরা ওযর পেশ কর না, আমরা কখনও তোমাদের সত্যবাদী বলে মনে করব না; আল্লাহ্ তো আমাদেরকে তোমাদের খবর জানিয়ে দিয়েছেন: আর ভবিষ্যতও আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলও তোমাদের কার্যকলাপ (আমল) পর্যবেক্ষন করবেন (উম্মতের আমলের সাক্ষী রাসূলও)। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তিত হবে এমন সত্ত্বার কাছে যিনি অদৃশ্য (গয়েব) এবং প্রকাশ্য সকল বিষয়ে অবগত আছেন, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দেবেন যা তোমরা করতে সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৯:৯৪।
তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী। পরন্ত তিনি অদৃশ্য (গায়েব) বিষয় কারও কাছে প্রকাশ করেন না, তবে তাঁর মনোনীত রসূল ব্যতীত। তখন তিনি তার অগ্রে ও পশ্চাতে প্রহরী নিযুক্ত করেন সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৭২:২৬-২৭।
বিষয়ঃ আদম কে আল্লাহ গায়েবের বিষয় জানিয়ে দিয়েছেনঃ (আয়াত ১ টি)
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ তিনি বললেন, হে আদম, ফেরেশতাদেরকে বলে দাও এসবের (গোপন) নাম। তারপর যখন তিনি বলে দিলেন সে সবের নাম, তখন তিনি বললেন, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আমি আসমান ও যমীনের যাবতীয় গোপন (গায়েব) বিষয় সম্পর্কে খুব ভাল করেই অবগত রয়েছি? এবং সেসব বিষয়ও জানি যা তোমরা প্রকাশ কর, আর যা তোমরা গোপন কর, সূত্র: আল্ ক্বোরআন ২:৩৩!
বিষয়ঃ গায়েবের বিষয়ে কাফেরগণ ভ্রান্ত ধারণা পোষন করতঃ (আয়াত ১ টি)
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ অথচ তারা পূর্ব থেকে সত্যকে অস্বীকার করছিল। আর তারা সত্য হতে দূরে থেকে অদৃশ্য (গায়েবের) বিষয়ের উপর মন্তব্য করত, সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৩৪:৫৩।
বিষয়ঃ গায়েব কোন অনুমান নয়ঃ (আয়াত ১ টি)
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ অদৃশ্য (গায়েব) বিষয়ে অনুমানের উপর ভিত্তি করে এখন তারা বলবেঃ তারা ছিল তিন জন; তাদের চতুর্থটি তাদের কুকুর। একথাও বলবে; তারা পাঁচ জন। তাদের ষষ্ঠটি ছিল তাদের কুকুর। আরও বলবেঃ তারা ছিল সাত জন। তাদের অষ্টমটি ছিল তাদের কুকুর। বলুনঃ আমার পালনকর্তা তাদের সংখ্যা ভাল জানেন। তাদের খবর অল্প লোকই জানে। সাধারণ আলোচনা ছাড়া আপনি তাদের সম্পর্কে বিতর্ক করবেন না এবং তাদের অবস্থা সম্পর্কে তাদের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ ও করবেন না সূত্র: আল্ ক্বোরআন ১৮:২২।
বিষয়ঃ যারা হেফাযত যোগ্য তাদেরকে গায়েব থেকে হেফাযত করেনঃ (আয়াত ১ টি)
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, কারণ আল্লাহ্ তাদের কতককে কতকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং পুরুষেরা নিজেদের অর্থ ব্যয় করে। সূতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত হয় এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও (গায়েবে) তার হেফাযত করে। আর স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ্ উচ্চ মর্যাদাশীল, মহান; সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৪:৩৪।
গায়েব শব্দ থেকে গঠিত ভিন্নার্থক কিছূ আয়াতঃ
বিষয়ঃ গায়েব অর্থ গভীরঃ (আয়াত ২ টি)
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, তোমরা ইউসুফ কে হত্যা করো না, তবে যদি তোমরা কিছু করতেই চাও, তাহলে তাকে কোন কূপের গভীরে (গায়া-বাতিল) নিক্ষেপ কর, যাতে কোন পথিক তাকে তুলে নিয়ে যায়; সূত্র: আল্ ক্বোরআন ১২:১০।
তারপর তারা যখন তাকে নিয়ে গেল এবং তাকে কূপের গভীরে (গায়া-বাতিল) নিক্ষেপ করতে একমত হল, তখন আমি তাকে ইঙ্গিতে জানিয়ে দিলাম যে, অবশ্যই তুমি তাদেরকে তাদের এ কাজের কথা বলবে, অথচ তারা তোমাকে তখন চিনতে পারবে না; সূত্র: আল্ ক্বোরআন ১২:১৫। ´
বিষয়ঃ গায়েব অর্থ অনুপস্থিতঃ (আয়াত ৪টি)
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ অতঃপর আমি স্বজ্ঞানে তাদের কাছে অবস্থা বর্ণনা করব। বস্তুতঃ আমি (আল্লাহ) অনুপস্থিত (গায়েব) তো ছিলাম না সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৭:৭।
ইউসুফ বললঃ এটা এজন্য, যেন আযীয জানতে পারে যে, আমি তার অনুপস্থিতিতে (বিলগায়েব) তার খেয়ানত করিনি এবং আল্লাহ্ বিশ্বাসঘাতকদের চক্রান্ত এগুতে দেন না, সূত্র: আল্ ক্বোরআন ১২:৫২।
সুলায়মান পক্ষীদের খোঁজ খবর নিলেন, অতঃপর বললেন, কি হল, হুদহুদকে দেখছি না কেন? নাকি সে অনুপস্থিত (গয়েব) সূত্র: আল্ ক্বোরআন ২৭:২০?
তারা সেখান থেকে অনুপস্থিত (গায়েব) হতে পারবে না; সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৮২:১৬।
বিষয়ঃ গায়েব থেকে ইয়াগ্-তাব যার অর্থ পরনিন্দা (আয়াত ১টি)
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ হে ঈমানদারগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় (ইয়াগ্-তাব)বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু সূত্র: আল্ ক্বোরআন ৪৯:১২।