অসাম্প্রদায়িকতা ও ইসলাম

সম্পাদনাঃ সৈয়দ শাহাদাত হুসাইন

আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, যিনি সমস্ত জগতের প্রতিপালক, যিনি সমস্ত সৃষ্টির প্রতিপালক, তাই তিনি অসাম্প্রদায়িক রব যিনি মহান আল্লাহ। আর তিনি তার জগত সমুহের জন্য একজনকে নেতা নির্বাচন করেছেন, যিনি সমস্ত জগতের জন্য রহমত তাই তিনি অসাম্প্রদায়িক অগ্রদূত, সমস্ত সৃষ্টির জন্য যিনি রহমত, ওয়ামা আরছালনাকা ইল্লা রাহমাতাল্লিল আলামিন, আল্লাহ বলেন,  হে হাবীব আমি আপনাকে জগত সমুহের রহমত হিসাবে প্রেরণ করেছি। সকল সৃষ্টির জন্য যিনি রহমত স্বরূপ তাই তিনি অসাম্প্রদায়িক নবী।

সকল মানুষই ফিতরাতের ধর্মে জন্মগ্রহণ করে সুতরাং জন্মগতভাবে কেউ হিন্দু খ্রীষ্টান বৌদ্ধ নয়। ফিতরাতগত ভাবে মানুষ যে ধর্মে জন্মগ্রহন করে তা হচ্ছে দ্বীনে কায়্যিম। সেহতেু মানুষের ফিতরাত ও আকৃতিতে কোন বিভেদ নেই। তাই মহান আল্লাহ বলেনঃ তুমি নিজের চেহারা একনিষ্ঠভাবে ধর্মে কায়িম বা প্রতিষ্ঠিত রাখ। আল্লাহর প্রকৃতি বা ফিতরাত যেমন, মানব ফিতরাত বা প্রকৃতিও তেমন। আল্লাহ সৃষ্টি প্রক্রিয়ার পরিবর্তন করেন না। এটাই হচ্ছে প্রতিষ্ঠিত ধর্ম (দ্বীনে কায়্যিম)। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না, (সূত্রঃ আল্‌ ক্বোরআন ৩০:৩০)। যারা দ্বীনে কায়্যিম পরিবর্তন করতে চায় তারা কি অন্য কোন ধর্ম খুজছে?  এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেনঃ তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে? আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, তাঁর কাছে সমর্পিত এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাবে (সূত্রঃ আল্‌ ক্বোরআন ৩:৮৩)। স্রষ্টার নিকট সমর্পিত থাকাই হচ্ছে দ্বীন বা ধর্ম আর  সকল সৃষ্টিই আল্লাহর নিকট সমর্পিত। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেনঃ যে ব্যক্তির চেহারা আল্লাহর নিকট সমর্পিত, সে সৎকর্মপরায়ণ মুহছিন (সূত্রঃ আল্‌ ক্বোরআন ৩১:২২)। সকল মানুষের চেহারা বা আকৃতি এক এবং ফিতরাত বা প্রকৃতিও এক। তাই ফিতরাতের দিক থেকে এবং আকৃতির দিক থেকে সকল মানুষের চেহারা স্রষ্টার নিকট সমর্পিত। আল্লাহ নিজে স্বয়ং সম্পূর্ণ তাই তিনি তাঁর ক্ষমতায় ও ইচ্ছায় সকল সৃষ্টিকে ফিতরাতগত এবাদাতে মশগুল রেখেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু আছে নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় এবং তাদের প্রতিচ্ছায়াও সকাল-সন্ধ্যায় (সূত্রঃ আল্‌ ক্বোরআন ১৩:১৫)।

প্রত্যেক জাতির এবাদাতের পদ্ধতি আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন এবং সকল মানুষ তা পালন করেঃ আল্লাহ তাআলা বলেনঃ প্রত্যেক জাতির (বিভিন্ন ধর্মের মানুষের) জন্য আমি (আল্লাহ) নির্ধারিত করে দিয়েছি ইবাদতের পদ্ধতি, (না-ছিকূহু) যা তারা পালন করে (সূত্রঃ আল্-ক্বোরআন ২২:৬৭-৬৮)। সব ধর্মের স্বৃকীতি সুনিশ্চিত করেছে আল ক্বোরআন। অন্য ধর্ম পালনে কেউ কাউকে বাধা দেবে না, কেউ কোনোরূপ সীমা লঙ্ঘন করবে না। অন্য ধর্ম নিয়ে কেউ ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করবে না এই মর্মেও কোরআনে আয়াত নাজিল করেছে, মহান আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আর তাদের গালি দিও না, যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের এবাদাত করে তাহলে তারা সীমালংঘন করে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালি দেবে। এরূপেই আমি প্রত্যেক জাতির (বিভিন্ন ধর্মের) কাছে তাদের কাজকর্ম (আমল) সুশোভিত করে রেখেছি। অবশেষে তাদের রবের কাছে তাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তিনি তাদের জানিয়ে দেবেন যা তারা করত (সূত্রঃ আল্-ক্বোরআন ৬:১০৮)।

আমাদের জন্য আমাদের আমল বা কর্ম এবং তোমাদের জন্য তোমাদের আমল বা কর্মঃ এ বিষয়ে ১৭ টি আয়াত রয়েছে যা হতে পাঁচটি আয়াত উপস্থাপন করলাম। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (হে নাবী আপনি বলুনঃ) আল্লাহ আমাদের পালনকর্তা এবং তোমাদেরও পালনকর্তা। আর আমাদের জন্য আমাদের আমল এবং তোমাদের জন্য তোমাদের আমল। আমরা তাঁর জন্য নিবেদিত (সূত্রঃ আল্-ক্বোরআন ২:১৩৯)। অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (হে নাবী) আপনি বলুনঃ আমার জন্য আমার কর্ম এবং তোমাদের জন্য তোমাদের কর্ম। তোমরা দায়মুক্ত সে বিষয় থেকে যা আমি করি এবং আমিও দায়মুক্ত তোমরা যা কর সে বিষয় থেকে (সূত্রঃ আল্-ক্বোরআন ১০:৪১)। (হে নাবী) বলুন, আমাদের অপরাধের জন্যে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে না এবং তোমরা যা কিছু কর, সে সম্পর্কে আমরা জিজ্ঞাসিত হব না (সূত্রঃ আল্-ক্বোরআন ৩৪:২৫)। অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ আল্লাহ্ আমাদেরও রব এবং তোমাদেরও রব। আমাদের জন্য আমাদের কর্ম এবং তোমাদের জন্য তোমাদের কর্ম। আমাদের ও তোমাদের মধ্যে কোন ঝগড়া বিবাদ নেই। (সূত্রঃ আল্-ক্বোরআন ৪২:১৫)। এই আয়াতে লা-হুজ্জাতা বাইনানা- ওয়া বাইনাকুম অর্থ আমাদের সাথে অন্য ধর্মাবলম্বীদের কোন ঝগড়া বিবাদ নেই। সুতরা্ং সাম্প্রদায়িকতা ফিতনা থেকে তৈরী। মহান আল্লাহ তা’আলা বিশ্ববাসীকে সাবধান করে বলেনঃ লাইকরা-হা ফিদ্দীন, দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই। (সূত্রঃ আল্-ক্বোরআন ২:২৫৬)।

রাসূলগণ তার সম্প্রদায়ের কর্মের জন্য দায়ী ননঃ উক্ত বিষয়ে ১৬ টি আয়াত রয়েছে আমরা ৪ টি আয়াত আলোচনা করব। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ আপনি তো একজন উপদেশদাতা মাত্র, আপনি তাদের দায়গ্রস্থ কর্ম নিয়ন্ত্রক নন (সূত্রঃ আল্-ক্বোরআন ৮৮:২১-২২)। আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ তাদের সৎপথে আনার দায় আপনার নয়, বরং আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন (সূত্রঃ আল্-ক্বোরআন ২: ২৭২)। আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ আপনার উপর তাদের কোন কর্মরই জবাবদিহির দায়িত্ব নেই এবং তাদের উপরও আপনার কোন কর্মের জবাবদিহির দায়িত্ব নেই, (সূত্রঃ আল্-ক্বোরআন ৬:৫২)। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ আপনার দায়িত্ব তো পৌছে দেয়া এবং আমার দায়িত্ব হিসাব নেয়া। (সূত্রঃ আল্-ক্বোরআন ১৩:৪০)।

আল্লাহ মানুষকে একই জাতিসত্বায় পরিনত করতে চেয়েছিলেন কিন্তু একদল মানুষ মতভেদ করতেই থাকবেঃ  আর তোমার পালনকর্তা যদি ইচ্ছা করতেন, তবে অবশ্যই সব মানুষকে একই (মতাবলম্বী বা) জাতিসত্তায় পরিনত করতে পারতেন আর তারা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হতো না। তোমার পালনকর্তা যাদের উপর রহমত করেছেন, তারা ব্যতীত সবাই চিরদিন মতভেদ করতেই থাকবে এবং এজন্যই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আর আল্লাহর কথাই পূর্ণ হল যে, অবশ্যই আমি জাহান্নামকে জ্বিন ও মানুষ দ্বারা একযোগে পূর্ণ করব (সূত্রঃ আল্-ক্বোরআন ১১:১৮-১১৯)। তাই আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ মানুষ সব বস্তু থেকে অধিক কলহপ্রিয় (সূত্রঃ আল্-ক্বোরআন ১৮:৫৪)। তাই কলহের কারণে মানুষ বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে।

হাদীস পর্বঃ  বাব এ আসাবিয়্যাত

বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণ থেকেও অসাম্প্রদায়িকতা সুস্পষ্ট। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন ‘হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় এবং তোমাদের আদি পিতাও এক। একজন আরব একজন অনারব থেকে কোনো মতেই শ্রেষ্ঠ নয়। তেমনি একজন আরবের ওপরে একজন অনারবেরও কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। একজন সাদা চামড়ার মানুষ একজন কালো চামড়ার মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়, আবার কালোও সাদার চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়। শ্রেষ্ঠত্বের মূল্যায়ন করতে বিচার্য বিষয় হবে, কে তাক্বওয়াবান তথা আল্লাহ ও বান্দার হক কতদূর আদায় করল। এরই মাধ্যমে আল্লাহর কাছে তোমাদের সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী সেই ব্যক্তি, যিনি সর্বাপেক্ষা বেশি ধর্মভীরু’ (সূত্রঃ বায়হাকি)। সাম্প্রদায়িকতা কি? এ বিষয়ে হযরত মোহাম্মদ (সঃ) কি বলেছেন? রাসূল (সাঃ) বললেনঃ তুমি তোমার কওমকে অত্যাচার করার জন্য সহযোগিতা করলে তা হচ্ছে আসাবিয়্যাত বা গোত্রবাদ সূত্রঃ সুনান আবু দাউদ, হাদীস # ৫১১৯। ন্যায় ও কল্যাণের বিষয়ে নিজ কওমকে সাহায্য করা অন্যায় সম্প্রদায়প্রীতি নয়, বরং জুলুম ও অন্যায় কাজে কওমকে সহযোগিতা করাই হচ্ছে নিষিদ্ধ সাম্প্রদায়িকতা। এককথায় অন্যায়ের ক্ষেত্রে পক্ষপাতই হল সাম্প্রদায়িকতা, যা ইসলামে কঠিনভাবে নিষিদ্ধ। যারা সাম্প্রদায়িকতার ক্ষেত্রে যুদ্ধ করে তাদেরকে রাসূল নিজের উম্মত হিসাবে অস্বীকার করেছেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি লোকদেরকে গোত্রবাদের দিকে আহবান করে অথবা গোত্রবাদে উন্মত্ত হয়ে ভ্রষ্টতার পতাকাতলে যুদ্ধ করে নিহত হলে সে জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করলো। সূত্রঃ সুনান ইবনে মাজাহ হাদীস # ৩৯৪৮, মুসলিম ১৮৪৮, নাসায়ী ৪১১৪, সুনান আবু দাউদ, হাদীস # ৫১২১ হাদিসের মানঃ সহিহ। নিজ গোত্রকে ভালবাসা সাম্প্রদায়িকতা নয় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর নিকট জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর বাসূল! নিজ গোত্রের প্রতি ভালোবাসা কি গোত্রেবাদের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বলেনঃ না। তবে নিজ গোত্রকে অন্যের উপর অত্যাচারে সহায়তা করা গোত্রবাদের অন্তর্ভুক্ত। সুনান ইবনে মাজাহ হাদীস # ৩৯৪৯ আবূ দাউদ ৫১১৯। রাসূল (সাঃ) পারস্পারিক সহমর্মিতা, সহানুভূতি ও সহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছেনঃ রাসূল (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি দয়া করে না, সে দয়া পায় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে না, সে ক্ষমা পায় না। যে ব্যক্তি উদারতা প্রদর্শন করে না, সে উদারতা পায় না। যে ব্যক্তি অন্যকে রক্ষার জন্য সচেষ্ট হয় না সে রক্ষা পায় না। সূত্র আল আদাবুল মুফরাদ হাদীস # ৩৭২  হাদিসের মানঃ হাসান। অন্য হাদীসে নবী (সাঃ) বলেছেনঃ যে (সৃষ্টির প্রতি) দয়া করে না, (আল্লাহর পক্ষ থেকে) তার প্রতি দয়া করা হয় না সূত্রঃ সহীহ বুখারী শরীফ হাদীস # ৬০১৩ হাদিসের মানঃ সহিহ। অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ শুধুমাত্র হৃদয়হীন, নিষ্ঠুর ও দুর্ভাগা মানুষের কাছ থেকেই রাহমাত ছিনিয়ে নেয়া হয় সূত্রঃ জামে আত তিরমিজি হাদীস # ১৯২৩ হাদিসের মানঃ হাসান।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ সাবধান! যে যিম্মী (অমুসলিম যুদ্ধ বন্দী) ব্যক্তির চুক্তিবদ্ধ সম্প্রদায়ের কোন ব্যক্তির উপর যুলুম করবে বা তার প্রাপ্য কম দিবে কিংবা তাকে তার সামর্থ্যের বাইরে কিছু করতে বাধ্য করবে অথবা তার সন্তুষ্টিমূলক সম্মতি ছাড়া তার কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করবে, ক্বিয়ামাতের দিন আমি (ঐ মুসলমানের) তার বিপক্ষে বাদী হব। সূত্রঃ সুনান আবু দাউদ হাদীস # ৩০৫২ হাদিসের মানঃ সহিহ। অন্য হাদীসে নবী (সাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন অমুসলিমকে কতল করে, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। যদিও জান্নাতের ঘ্রাণ চল্লিশ বছরের দূরত্ব হতে পাওয়া যায়। সূত্রঃ সহীহ বোখারী হাদীস # ৩১৬৬ হাদিসের মানঃ সহিহ। অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন যিম্মিকে (অমুসলিম যুদ্ধ বন্দী) অন্যায়ভাবে হত্যা করবে, আল্লাহ্ তা‘আলা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। সূত্রঃ সুনান নাসাঈ হাদীস # ৪৭৪৭ হাদিসের মানঃ সহিহ।

নবী করিম (সা.) অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি নির্যাতন তো দূরের কথা, তাদের প্রতি মৌখিক অভিযোগও উত্থাপন করেননি। বরং কোনো বিরোধী যখন অসুস্থ হতো, তখন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে দেখতে যেতেন।

রাসূলুল্লাহ (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদিনের চিরাচরিত নিয়ম ছিল, যখন কোনো সেনাবাহিনী প্রেরণ করার প্রয়োজন হতো, তখন যুদ্ধ সম্পর্কিত বিভিন্ন নসিহত, দিকনির্দেশনার পাশাপাশি একথা অবশ্যই বলে দিতেন যে, ‘যুদ্ধকালীন সময়ে বা যুদ্ধের পর কোনো মন্দির-গীর্জা-উপাসনালয় ভেঙে ফেলবে না। সূত্রঃ মুসান্নাফ আবি শায়বা : ৩৩৮০৪

সূফীদের নেতা সূফী মাওলানা রুমি ছিলেন প্রেম, সম্প্রীতি ও প্রজ্ঞার কবি ও মানবতাবাদী দার্শনিক। বিগত সুফি সাধকগণ তাদের লেখনীর মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে যে অনন্য অবদান রেখেছেন, তা বিশ্ববাসীর কাছে আজও সমাদৃত।

মুক্তিযুদ্ধ ধর্মীয় চেতনা থেকে হয় নি, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল মানবিক চেতনা থেকে, সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা হয়েছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনায়।  মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের জন্য এদেশের মানুষ জীবন দিয়েছিল, সাম্প্রদায়িকতাকে আশ্রয় করে সেই চেতনায় ফাটল ধরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বাধীনতার জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় স্বাধীন দেশে সাম্প্রদায়িকতা মোটেও কাম্য নয়।             

মানবতার কবি, অসাম্প্রদায়িক কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন- ‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই নহে কিছু মহীয়ান/ নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি, / সব দেশে, সব কালে, ঘরে ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।